মেট্রোরেল ও উন্নয়ন সম্ভবনা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ | Bangladesh in terms of metrorail and development potential
মেট্রোরেল ও উন্নয়ন সম্ভবনা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ |
Bangladesh in terms of metrorail and development potential
১.১ সূচনা:
স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। এই ৫০ বছরে দেশের উন্নয়ন লক্ষনীয় এবং প্রশংসনীয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে সরে এখন আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে জায়গা করে নিচ্ছি। এই মাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। সম্প্রতি বাংলাদেশের উন্নয়নের খাতায় আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় মুক্ত হয়েছে, তা হচ্ছে মেট্রোরেল উন্নয়ন সম্ভাবনা অর্জনে বিশ্বে এগিয়ে থাকা ৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যেখানে অনেক উন্নয়নশীল দেশই উন্নয়ন অর্জনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, সেখানে মহামারীকালে ও বাংলাদেশের এই অর্জন অভাবনীয়। এই মেট্রোরেল চালুতে রাজধানী শহর ঢাকায় যানজট কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান বিজয়ের মাসে এই মেগা প্রকল্পটি উদ্ধোধন করবেন। সে সাথে বর্তমান গনপরিবহন ব্যবস্থায় ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরে মেট্রোরেল গণপরিবহনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। মেট্রোরেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ ও মানুষ নিশ্চিতে সময়মত এটা ব্যবহার করতে পারে।
(প্রথম আলো)
১.২ মেট্রোরেলের সাধারণ ধারনাঃ
এই মেট্রোরেলের ১২টি স্টেশন থাকবে মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে উড়াল সেতুর ওপর এমআরটি-৫ নির্মাণ প্রকল্পে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটা লাইন নির্মাণ করা হবে মেট্রো শহরের অভ্যন্তরে বারবার অবর্তিত হয়ে চলে যে রেল সেটাই মেট্রোরেল, মেট্রোপলিটন শব্দটি থেকে মেট্রো এসেছে। সাধারনত এটা পাতাল রেলকে বোঝায়। মেট্রোরেল একটি দ্রুত গনপরিবহন ব্যবস্থা। এটি শহরের যানজট হ্রাসের জন্য নির্মিত হয়। মেটোপলিটন রেল এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেট্রোরেল। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো স্পর্শ করে গণপরিবহনের জন্য প্রতিষ্ঠিত রেল ব্যবস্থাই টাকা মেট্রোরেল, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস রেপিড ট্রানজিট বা সংক্ষেপে এমআরটি (MRT) নামে পরিচিত। এটির লাইনের মোট সংখ্যা ৫টি। মেট্রোরেল চালু হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২১.২৬কিমি (নিমানাধীন) ১২৮.৭৪১ (পরিকল্পিত)। ২৯ ডিসেম্বর থেকে জনসাধারনের চলাচলের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা।
(বার্তা ২৪)
১.৩ প্রকল্পের সূচনা ও বাস্তবায়নঃ
ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল MRT-6 এর কারিগরি দিক এবং অর্থায়নে জড়িত সংস্থা হলো জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেসিন)। আর মেট্রোরেলটি নির্মাণে কাজ করছে ইতালিয়ান থাই (আইটি) কোপানি লিমিটেড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন ২০১৬ সালে মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সূচনা করেন ৷ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সংঙ্গে ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আগে অর্থ্যাৎ ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অগ্রাধিকারমূলক, মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন লাভ করে। পুরো দশমিক ০১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ০২ আগস্ট ২০১৭ সালে।
(দেশ রূপান্তর)
১.৪ মেট্রোরেলের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানিকীকরণ:(সমকাল)
২.৩ স্টেশনের নতুন সম্ভাবনা:
মেট্রোরেলের স্টেশন সংখ্যা প্রথমে ছিল ১৬টি। সংশোধিত প্রকল্পে বর্তমান স্টেশনসংখ্যা ১৭টা সংশোধিত প্রকল্পে বর্তমান মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত। মেট্রোরেল প্রকল্প প্রথমে ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার প্রথম ধাপে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে দুদিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। ট্রেন চালানোর জন্য ঘণ্টায় ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে ৫টি। এ রুটের স্টেশন ১৬টি। এম আরটি-৬ এর চূড়ান্ত রুট উত্তরা তৃতীয় ধাপ-পল্লবী-রোকেয়া সরনির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ী হয়ে ফর্মগেট সোনারগাঁও হোটেল শাহবাগ টিএসসি দোয়েল চত্বর- তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। রুটের স্টেশন ১৬টি - উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। মেট্রোরেল এর প্রতিটি পিলারের ব্যাস দুই মিটার। পিলারের উচ্চতা ১৩ মিটার। একটি পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ৩০-৪০ কি. মি.। মেট্রোরেল চালুতে ঢাকার জ্যাম অনেকাংশে কমে আসবে, মেট্রোরেলের প্যাসেঞ্জার ক্যাপাসিটি ১ লক্ষ ৮ শত পারডে। সুতরাং আমরা বলতে পারি মেট্রোরেল চালুতে অনেক উন্নতি লাভ হয়েছে। এজন্য আমাদের সঠিকভাবে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে হবে। আমরা নিয়ম অনুযায়ী মেট্রোরেল ব্যবহার করব, মেট্রোরেল এ স্টেশন আছে ৯টি। প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে! এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা।
(প্রথম আলো)
২.৪. ঋণ পরিশোধের উপায়ঃ
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সঙ্গে ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আগে অর্থ্যাৎ ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অগ্রাধিকারমূলক মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন লাভ করে। পুরো ২০ দশমিক ০১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্পের ৮৫ শতাংশের ব্যয় বাবদ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেবে কয়েক ধাপে। বাকি ৫ হাজার ৪ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ২২,০০০ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য ঋণ প্রদান করেন জাইকা। জাইকা ঋণ প্রদান করেন ৭৫ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ৭৫%। মেট্রোরেল প্রকল্পের ধরণের পরিমাণ হচ্ছে ১৬.৫৯ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পের সরকারের মোট অর্থায়নের পরিমান হচ্ছে ৫,৩৯০ কোটি টাকা অর্থ্যাৎ মোট শতাংশের ২৫%। প্রকল্প মোট বাজেট ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩০ থেকে ৪০ বছরে হবে ঋন পরিশোধ, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মানধীন মেট্রোরেল সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এতে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋন দিচ্ছে। এই ঋন পরিশোধে বাংলাদেশ সময় পারে ৩০ থেকে ৪০ বছর। সরকার দেবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। জাপানের কাছ থেকে পাঁচটি আলাদা চুক্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যম ঋন নিয়েছে ডিএমটিসি এল। ঋনের কিস্তিও পরিশোধ করা হবে ইআরডির মাধ্যমে। প্রকল্প নথি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দুই ঋণ চুক্তির সুদ শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১০০ টাকার জন্য বছরে ১০ পয়সা সুদ দিতে হবে। ২০১৭ সালে সই হওয়া এই ঋণ চুক্তির গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। চুক্তির মেয়াদ ৪০ বছর। অর্থ্যাৎ ২০৫৭ সালের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তী তিন ঋণ চুক্তির সুদের হার শতাংশ ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং দশমিক ৭০ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি সে জায়গায় পৌঁছাবে, ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে না। ২০২১ সালে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ কমিটি হিসাব দিয়েছিল, এমআরটি-৬ প্রতি মাসে পরিচালন খরচ হবে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক খরচ হবেই ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি টাকার বেশি যাবে শুধু জাইকার ঋন ও সরকারের খরচ পরিশোধে। প্রকল্পের ঋণ ও সরকারের খরচ এ দুই খাতের কিস্তিও বাড়বে। মেট্রোরেল পরিচালনার বেতন-ভাতা বাবদ দিনে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৭১৭ টাকা প্রয়োজন। হবে। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, কত আয় হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। মেট্রোরেল পুরোপুরি বানিজ্যিক অপারেশনে যাওয়ার পর বলা যাবে। সোয়া ১ কোটি টাকা খরচ কমবে পরিচালন ব্যয় কমায়। বছরে ২ লাখ ২ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ কমবে। এসব হিসাবেও মেট্রোরেল লাভজনক।
(সমকাল)
২.৫ সক্ষমতা:
বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, ঋণ ফাঁদ ও পরিশোধের সক্ষমতার ব্যাপারটি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কারণ কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প শুরু হয়েছে, এসবই বিদেশি ঋন। আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ সব কিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আর্থিকভাবে সমস্যা থাকলেও সামাজিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তাই রাজধানী ও এর আশেপাশের যানজট কমাতে দেশের স্বার্থে মেট্রোরেল দরকার। সার্ভিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি গষেণা পতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফোলো অধ্যাপক মোস্তাফিকুর রহমান ঢাকা প্রকাশ কে বলেন বাংলাদেশের অবকাঠামো ও ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থ-সামাজিকভাবে এর ইতিবাচক দিক আছে।
(ঢাকা প্রকাশ)
২.৬ সস্বস্তিতে স্বস্তির সন্ধান সরকারের:
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেট্রোরেলের কারনে ট্রানজিট ব্যবস্থা বাড়বে এবং স্টেশনগুলোর আশপাশে অসংখ্য ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। উন্নত পরিবহন পরিকাঠামোর কারণে নতুন সংস্থাগুলো বিকাশের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বর্তমান ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে৷ সামগ্রিকভাবে, স্টেশন ও রুটের কাছাকাছি স্থাপন করা এ ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে। দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) যথেষ্ট অবদান রাখবে। উত্তরা কমলাপুর রুটে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন যা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস রেপিড ট্রানজিট লাইন-৬ বা এম আরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হলে প্রতি ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করতে পারবেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরি দেশ রূপান্তরকে বলেন মেট্রোরেল চালু হলেও পুরো কাজ না শেষ করে অর্ধেক চালুর ফলে সেভাবে সুফল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সরকারের উচিত মেট্রোরেলের ভাড়া কমানো। তাহলে বেশির ভাগ যাত্রী চড়বে। তাহলে যানজটও কমবে।
(দেশ রূপান্তর)
প্রযুক্তির চমক
মেট্রোরেল:
ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন মেট্রোরেল। গত ২৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করেছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। জাপানের প্রযুক্তিতে তৈরি দেশের প্রথম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেলের নান্দনিক স্টেশনগুলোতে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সব সুবিধা। ট্রেন অটোমেটিক স্টপ কন্ট্রোলের মাধ্যমে কখন কোথায় থামতে হবে- সেটি নির্ধারিত হবে এবং নানা প্রযুক্তি সুবিধা যুক্ত হওয়ায় চালকের বেশি কিছু করার নেই। ট্রেন চলতে সফটওয়্যারে অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের (ওসিসি) মাধ্যমে পুরো সিস্টেম পরিচালিত হবে। প্রোগ্রাম রুট কন্ট্রোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের রুট গুলো নিয়ন্ত্রন করা হবে। এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় বেগ পোহাতে হবে না। ঢাকা মেট্রোর অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মুভিং ব্লক কমিউনিকেশন বেজত টেলি কন্ট্রাল সিস্টেম এবং অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও) থাকবে। মেট্রোরেলে যাত্রী নিরাপত্তায় থাকছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। মেট্রোরেল চোখধাঁধানো প্রযুক্তির সর্ম্পকে জেনে নেওয়া যাক-
(সমকাল)
অটোমেশন সিস্টেমঃ
বাংলাদেশের প্রথম উড়াল
মেট্রোরেলের নিমন্ত্রন ও যান্ত্রীদের নিরাপত্তা নিচিতে কমিউনিকেশন বেজড ট্রেন
কন্ট্রোল সিস্টেম (সিবিটিসি) যুক্ত করা হয়েছে। থাকছে অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটি
ও) অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন (ত্রাটিপি) অটোমেটিক ট্রেন সুপার ভীশন (এটিএস) ও মুডিং
ব্লক সিস্টেম (এমবিএস)। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে স্টিকন ডোর সিস্টেম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুর-কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন
বিশেষজ্ঞ ডঃ মোঃ মিজানুর রহমান জানান, এম আরটি একটি রেল বেজট প্রকল্প হওয়ায় এটি
নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করবে এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মুভিং ব্লক কমিউনিকেশন বেজট
টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে, অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন বা এটিও থাকবে। এসবের ফলে
চালকের কিছু করার থাকবে না। টেরের সম্পূন নিয়ন্ত্রন সেন্ট্রাল কন্ট্রোল যেখানে
থাকবে সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে।
(সমকাল)
৩.২ যানজটের নগরে স্বস্তির নতুন স্বাদঃ
মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন নীলিমা বেগম। তিনি প্রতিদিনই নিজের কর্মস্থল আগারগাঁ ও সমবায় অফিসে যাতায়ত করেন। গত কয়েক বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়ত করতে হয়েছে এ কর্মজীবী নারীকে। মেট্রোরেলের উদ্ধোধনের দিনক্ষন ঠিক হওয়ার পর থেকে তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। গতকাল মঙ্গলবার নীলিমা বেগমের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। যানবাহনের চরম সংকটের মধ্যে একজন মহিলা হিসেবে বেশিরভাগ সময় গনপরিবহনে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে রিকশা বা অটোরিকশায় চলাফেরা করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাসা থেকে বের হয়ে খুব সহজেই মেট্রোরেল দিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারব, আমার মতো এমন হাজার হাজার কর্মজীবি মহিলা এ সুবিধা পাবেন। ভাবতেই ভালো লাগছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা ফ্লাট প্রকল্পে বসবাস করেন মমতাজ উদ্দিন। তিনি ফার্মগেট এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। গতকাল বিকেলে কথা হয় তার সাথে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, উন্নত দেশের মতো আমরাও মেট্রো রেলে চড়তে পারব। মাতায়তের ভোগান্তি কমবে। সময় ও বাঁচবে এখন ব্যবস্থাপনা কেমন হয় তাও দেখার বিষয়। তবে আমার মতো অনেকেই আশাবাদী ভালোই হবে। দেশের প্রথম মেট্রোরেলের মাত্র নিয়ে নীলিমা বেগম ও মমতাজ উদ্দিনের মতো সাধারন মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। বিশেষ করে উত্তরা পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজী পাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের মাথা একটু বেশিই। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে যারা বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এলাকায় যাতায়ত করবেন তারা মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাত্রাপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
(দেশ রূপান্তর)
৩.৩ বাজেট ও অর্থনৈৗতক গুরুত্বঃ
পুরো ২০.১ কিলোমিটার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৭৫%, জাইকা দিবে বাকিটুকু বাংলাদেশ রাজধানীর ব্যবসা বানিজ্য গতিশীল হবে। কেননা বর্তমানে যানজটের কারণে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। তাই মেট্রোরেল হলে তা সহজ হবে। মেট্রোরেল মূলত একটি দ্রুত পরিবহনব্যবস্থা যা বিশ্বের অনেক বড় শহরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গণপরিবহনের জন্য ঢাকা মেট্রো রেল হলো জাইকা এর অর্থায়নে একটি সরকারি প্রকল্প। এটি প্রত্যাশিত যে এ ধরনের পরিবহন মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করে এবং তাদের উৎপাদনশীল সময় বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মেট্রোরেল বিশ্বের অনেক বড় শহরে পনপরিবহনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল, যা এখন লন্ডন আন্ডার গাইন্ড একটি অংশ। ১৮৬৮ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এনওয়াইতে তার প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেলব্যবস্থা চালু করে এবং ১৯০৪ সালে, নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথম বারের জন্য খোলা হয়েছিল।এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে, জাপান হলো প্রথম দেশ যেটি ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেলব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় তার মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ শুরু করে। এর পরে ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রো রেল ব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেল-ব্যবস্থা চালু রয়েছে' বাংলাদেশে মেট্রোরেল চালু করার জন্য সরকার ঢাকা ম্যাসরেপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পের ধারনা নিয়ে কাজ করছিল। অবশেষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে, ঢাকা ম্যাসরেপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা মেট্রোরেল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দ্বারা অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের জন্য মোট ৫টি রুট লাইন প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে এমআরটি লাইন ১:২, ৪, ৫, এবং ৬। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এ জেসিন (জাইকা) এর অর্থায়নে দ্যা ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট সার্ভে (ডিএইচইউটিএস ১) মূল্যায়ন করা হয় এবং এমআরটি রুট নির্বাচন করা হয়। মাননীয় পধানমন্বী শেখ হাসিন জুন ২০১৬ সালের নির্মাণ কাজের সূচনা করেন।
(যুগান্তর)
৩.৪ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পরিবহন ব্যবস্থার এক
নতুন দিগন্ত:
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে দেশের প্রথম মেট্রোরেল বাণিজ্যিক ভাবে যাত্রা শুরু করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান বিজয়ের মাসে এই মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। এই মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানী শহর ঢাকায় যানজট কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা যায়। সে সাথে বর্তমান গনপরিবহন ব্যবস্থায় ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাসে যেতে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে শুরুতে ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে এবং আশা করা যায় ২০৩৫ সাল নাগাদ যাত্রীসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ লাখের বেশি। মেট্রোরেল চালু হলে যোগাযোগ স্বাধীনতা আসবে, অর্থনীতির গতি বাড়বে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মেট্রোরেল ঢাকার ১৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য যাতায়ত সহজ করবে।
(বার্তা ২৪)
৪.১ বাংলাদেশের প্রথম নারী চালক মেট্রোরেলের:
দেশের ইতিহাসের প্রথম এই মেট্রোরেলের চালক একজন নারী। মরিয়ম আফিজা প্রধানমন্ত্রীসহ মেট্রোরেলের যাত্রীদের প্রথম বহর নিয়ে আগারগাঁওয়ে যান। একারণে এই দিনটি আফিজার জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবে। জানা গেছে মেট্রোরেলের প্রথম চালক মরিয়ম আফিজা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালানের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মরিয়ম আফিজা। গেল বছরের ২ নভেম্বর নিয়োগ পান তিনি। মরিয়ম আফিজা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। আফিজার এমন সাফল্যে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে মরিয়াম আফিজা চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় ফিরে আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন।মেট্রোরেলের প্রথম নারী চালক হতে পেরে উচ্ছ্বসিত মরিয়ম আফিরা বলেন ২০২১ সালের ২ নভেম্বরে আমি নিয়োগ পাই। এরপর থেকে স্বপ্ন বুনছি। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য মেট্রোরেল যেমন স্বপ্নের মতে ঠিক তেমনি মেট্রোরেল আমার কাছেও একটা স্বপ্ন। আমি নিজে ট্রেন চালাবো, এটা ভেবে আমার বেশ আনন্দ লাগছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিস্ময় প্রকল্প মেট্রোরেল। তিনি সব সময় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। তার অংশ হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থী নারী চালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। নারী হিসেবে আফিজা সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে।
(যুগান্তর)
৪.২ জটের শহরে জাদুর মেট্রোঃ
চ্যালেঞ্জ জয় করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরনের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দুয়ার খুলছে বাংলাদেশ। নদীর দুই তীরে দুই শহরের স্বপ্ন পূরনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কর্ণফুলীর তলদেশে দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে। আজ বুধবার নগর পরিবহনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক বড় প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল। মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর মানুষ পাবে যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির পাওয়ার স্বস্তির বার্তা। সেই সঙ্গে সানজটে আটকা পড়ে কর্মঘন্টা নষ্টের যে আর্থিক ক্ষতি সেটা কেটে যাবে। কমবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিরসরের মাত্রা। অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার হবে। জীবন যাপনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এই মেট্রোরেল চড়াতে পারলে নগর পরিবহনে সুফল পাওয়া যাবে।
আর যানজটের শহরে নিরাপদ একটি বাহন হবে মানুষের জন্য। ডিএমটিসি এলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেট্রোরেল শহরের যোগাযোগ নতুন যাত্রা যোগ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন শুরুতে ১০ সেট ট্রেন চললেও ধীরে ধীরে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হবে। ২৪ সেট রেল নিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চলবে দেশের প্রথম উড়াল রেল। মেট্রোরেল ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুল নেওয়াজ বলেন মেট্রোরেল একটি পরিক্ষিত যাতায়াত মাধ্যম।
(দেশ রূপান্তর)
৪.৩ মেট্রোরেলের সুবিধা ও অসুবিধা:
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী সেখানে থাকছে মেট্রোরেলের সুবিধা। যে রাজধানীতে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। আর পৃথিবীর যানজটযুক্ত শহর গুলোর মধ্যে ঢাকা একটি শহর। যার কারণে কোটি লক্ষ্য মানুষদের দিনের পর দিন নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হচ্ছে। মানুষের সেই ভোগান্তি দূর করার জন্য ঢাকা যে যানজট মুক্ত করার জন্য বর্তমান সরকার ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোরেল পরিকল্পনা করেন। তার পরে ২০১৬ সালে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। যা ঢাকা শহরের মানুষের এত দিনের স্বপ্ন ছিল তা পূরণ হতে চলেছে। কারণ যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যতটা দ্রুতগামী সেই দেশে ততটাই যানজট মুক্ত। তাই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুতগামী করার লক্ষ্য মেট্রোরেল প্রকল্প। অসুবিধা নাই বললেই চলে। মানুষের চলাচল করার ক্ষেত্রে অনেক সময় বেঁচে যাবে। প্রতি স্টেশনে থাকবে সুপরিশর ফ্ল্যাটফর্ম ও যাত্রীদের জন্য থাকবে আরামদায়ক ব্যবস্থা ও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। প্রত্যেকটি ট্রেন হবে অত্যাধুনিক ও যাত্রীদের চলাফেরার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না। ৬০ হাজার যাত্রী প্রতি ঘণ্টায় চলাচল করতে পারবে। ভাড়া আদায় করা হবে ডিজিটাল ব্যার্ড দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে। যাত্রীদের সুবিধার্থে পতিসড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন এসে দাড়াবে ওঠা নামার জন্য। শহরের মানুষদের যানজট ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। শহরের পরিবেশ ভালো থাকবে। মেট্রোরেল দেশের উন্নয়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
(আইডিয়াল বাংলা)
৪.৪ পরিবেশ দূষণ নিরসন:
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ চালিত এ ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকা মহানগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে মেট্রোরেল কতটা ভূমিকা রাখবে। কমবে জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার। ঢাকা মহানগরের জীবনযাত্রার ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ হবে। বহুলাংশে হ্রাস পারে যানজট। সাশ্রয় হবে কর্মঘন্টা। সাশ্রয়- কৃত এসব কর্মঘন্টা দেশের অর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে। ডিএমটিসিএল সূত্রে যানা গেছে, মেট্রোরেল সম্পূর্ন বিদ্যুৎ চালিত বিধায় কোন ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হবে না। ফলে বায়ু দূষণের সুযোগ নাই। সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বরং পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
(বার্তা ২৪)
৫.১ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার:
ঢাকাবাসীর দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়গুলো বেশিরভাগ কেটে যায় যানজটে আটকা পড়ে। যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানি ব্যয় ও বাড়ছে। যাতায়াত খরচসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাঁচবে। বছরে জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হবে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে অন্যান্য গণপরিবহনের সংখ্যা কমবে। এতে করে কমবে দুই-লাখ টন কার্বন নিঃসরণ। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন মেট্রোরেলের কারণে ট্রানজিট ব্যবস্থা বাড়বে এবং স্টেশনগুলোর আশপাশে অসংখ্যা ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। অন্যদিকে বর্তমান ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে।
(দেশ রূপান্তর)
৫.২ স্বপ্নের
মেট্রোরেল হোক সবার পরিবহনঃ
স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী উদ্ধোধনের পরদিন থেকে রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। ঢাকার নারকীয় পরিবেশের গনপরিবহন ব্যবস্থা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী এই মেট্রোরেল চালু করেন। আমাদের দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও চলাচল এই প্রথম। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন অভিজ্ঞ নেই। পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা থাকলে ও এই সক্ষমতা কাজে লাগানোর মতো আমাদের নগরীতে সার্বিক অবকাঠামো নেই। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয় সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে। মেট্রোরেল নির্মাণে অভিজ্ঞতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(দেশ রূপান্তর)
৫.৩ উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায় এই প্রকল্পটিকে দেশের মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে। এটির সফল নিমাণ কাজ সম্পন্ন করলে রাজধানীবাসী হাফ ছেড়ে বাঁচবে। অনেক অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকেও বেঁচে যাবে দেশ। যানযট নিরসনে বড় সড়কগুলো ৪ লেন ও ৬ লেনে উন্নীন করা হচ্ছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেলের মতো মোগা প্রকল্প যা দ্রুত দৃশ্যমান হচ্ছে। মানুষ স্বস্তিদায়ক সেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে বিশেষ করে বৃদ্ধ শিশু পতিবন্ধী ও নারীরা দুর্বিষহ কষ্ট থেকে মুক্তি পারে। উল্লেখ্য যে, যাত্রীরা নির্ধারিত স্থান থেকে ওঠানামা করার ফলে পড়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর ঢাকা মহানগরী।
(প্রথম আলো)
No comments